ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নে মুরগি চুরির অপবাদ দিয়ে স্থানীয় মেম্বর আমজাদের নেতৃত্বে রুবেল (১৪) নামের এক কিশোরকে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- বিচারের নামে টাকা না দেয়া হলে বা টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে এমন ফাঁদ পেতে অনেক জনপ্রতিনিধি এমন করে থাকেন।
এ বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে এক সপ্তাহের মধ্যে ভোলা জেলার ডিসি ও স্ব -থানার ওসিকে রিপোর্ট প্রদানের জন্য আদেশ দেন।
আজ সোমবার (২১ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বিত একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পাশাপাশি ডেপুটি অ্যটর্নি জেনারেল কে নির্দেশ দেন স্ব-জেলা প্রশাসক ও ওসিকে অবহিত করার জন্য।
গত ১৫ নভেম্বর এই ঘটনা ঘটলেও নির্যাতনকারীদের হুমকি আর আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ওই কিশোরের পরিবার মামলা করতে পারেনি। তবে নির্যাতনের দৃশ্য শনিবার ফেসবুকে ভাইরাল হলে ঘটনার একমাসের বেশি সময় পর শনিবার পুলিশ ওই কিশোরের মাকে ডেকে নেয়। পরে হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আমজাদ হোসেনসহ ৬ জনকে আসামি করে শশীভূষণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য আসামিরা হলো জাহাঙ্গীর, কবির ও মামুনের নাম জানা যায় পুলিশ সূত্রে। মামলার সকল আসামীই বর্তমান ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত।
নির্যাতিত রুবেলের মা বিলকিছ বেগম বলেন, রুবেল জেলে নৌকার বাবুর্চি কাজ করে।
ঘটনার আগের দিন বনভোজন খাওয়ার জন্য রুবেলসহ বেশ কয়েকজন মুরগি কিনে আনে। সেই মুরগি চুরি করে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয় মেম্বার। পরে ১৫ নভেম্বর মুরগি চুরির অপবাদ দিয়ে মেম্বার বাড়ি থেকে রুবেলকে ডেকে নিয়ে ৭নং ওয়ার্ডের হাজারীগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে গ্রামবাসীর সামনে বেঁধে মারধর করেন।
তিনি জানান, একদিকে রুবেলকে পেটানো হয়, অন্যদিকে টাকার জন্য তার কাছে খবর পাঠানো হয়। পরে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদারের কাছে গেলে মেম্বারকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেয়ার কথা বলেন। পরে নিরুপায় হয়ে বিলকিছ বেগম নাকফুল আর গলার গহনা বন্ধক রেখে ৫ হাজার টাকা এনে মেম্বার আমাজাদ হোসেনকে দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন।
বিলকিছ বেগম বলেন, ঘটনার পর অর্থাভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারিনি। এছাড়াও মেম্বারের হুমকির কারণে মামলাও করতে যাইনি। পরে থানায় ডেকে নিয়ে মেম্বারসহ ৬ জনকে আসামি করে মামলা নেয়।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত মেম্বার আমজাদ হোসেন বলেন, চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমি মুরগি চুরির কঠিন বিচার করেছি। বিচার করতে গেলে একটু আধটু মারধর করতেই হয়। তবে চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার দাবি করেন, ঘটনা প্রসেঙ্গ তিনি কিছুই জানতেন না। নির্যাতনের পর রুবেলের মা তাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
শশীভূষণ থানার উপ-পরিদর্শক মামালার তদন্ত কর্মকর্তা পবিত্র কুমার জানান, এই ঘটানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
আজ সোমবার চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন বরিশালটাইমসকে বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে একটি রুলের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়াও কিশোর রুবেলের শারীরিক চিকিৎসা, পূর্নবাসন, ও শতভাগ নিরাপত্তা দেয়া হবে।’
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply